ডেস্ক নিউজ : সাইকেল চুরির কথিত অভিযোগে এমদাদুল হক(১৩) নামে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রকে গাছে ঝুলিয়ে মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আহত স্কুল ছাত্র এমদাদুল হক আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের মৃত সফিকুল ইসলামের ছেলে। সে মহিষখোচা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে।
অভিযোগে জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর বড় বোনের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ মিটাতে স্কুলের পাশাপাশি মহিষখোচা বাজারের চায়ের দোকানে কাজ করতো এমদাদুল হক। প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যায় এমদাদুল।
পরদিন বুধবার সকালেই ফোন করে তাকে ডেকে নেয় ওই বাজারের প্রভাবশালী মোখলেছার রহমানের ছেলে মহিষখোচা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিক বাবু(২৮)। এ সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই বাবু তাকে টেনে পাশ্ববর্তি গ্রামীণ ব্যাংকের পিছনে বাগান বাড়িতে নিয়ে যায়।
সেখানে হাত পা গাছের সাথে বেঁধে তাকে মারপিট করে জানতে চায় মঙ্গলবার রাতে তার দোকানের পাশে রাখা বাইসাইকেলটি কোথায়? এ প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এমদাদুলকে বেধম মারপিট করে গলায় ছুরি লাগিয়ে হত্যার হুমকী দেয় ছাত্রলীগ নেতা আশিক বাবু ও তার লোকজন।
এক পর্যায়ে স্থানীয়রা এমদাদুলের আর্তচিৎকারে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে আদিতমারী হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে এ ঘটনার বিচার চেয়ে এমদাদুলের মা আঞ্জু বেগম বাদি হয়ে বুধবার দুপুরে আদিতমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
হাসপাতালের বেডে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর এমদাদুল হক জানায়, ফোন করে ডেকে নিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগে গায়ের মাফলার দিয়ে হাত পা বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে মারপিট শুরু করে বাবু। যে সাইকেল হারানোর কথা বলেছে, সেই সাইকেল কার বা কি সমস্যা সে বিষয়ে তার কোন জানা নেই বলেও জানায় সে।
এমদাদুলের মা আঞ্জু বেগম জানান, না খেয়ে থাকলেও তার এমদাদুল চুরি করতে পারে না। সংসার পরিচালনা করতে তার ছেলে লেখা-পড়ার পাশাপাশি চা বিক্রি করছে। তিনি এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।
মহিষখোচা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন সাদ্দাম বলেন, ঘটনাটি লোক মুখে শুনেছি। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মহিষখোচা হাটের ইজারাদার তমিজার রহমান জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখ জনক। স্কুল ছাত্র ও চায়ের দোকানদার এমদাদুলের মুখে শুনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আতিমারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম আম্বিয়া আদিল জানান, এমদাদুলের সারা শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ডান কান ও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে। সে আশংকামুক্ত হলেও সেরে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হলেশ্বর রায় জানান, অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।